সৎ মায়ের নির্যাতনের শিকার আড়াই বছর বয়সী শিশু মরিয়মকে আর বাঁচানো গেল না। রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায় সে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিশুটির চাচা মো. তারেক মিয়া। তিনি বলেন, নির্যাতনে পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গে সংক্রমণ তৈরি হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছিল মরিয়মের পুরো শরীরে। চিকিৎসকরা তার অস্ত্রোপচারও করেছিলেন।
শিশু মরিয়ম আক্তার ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের মোস্তফা কামালের মেয়ে। মোস্তফা কামাল শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা গ্রামে ১৪ শতাংশ জমি কিনে বহুতল ভবন গড়ে তুলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুবাই প্রবাসী। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে জন্ম হয় শিশু মরিয়মের। পরে দুবাই প্রবাসী আলিফা আক্তার রিপার সঙ্গে মোস্তফা কামাল পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়। তখন শিশুটির বয়স ছিল চারমাস।
এসময় আলিফা আক্তারকে বিয়ে করে দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন মোস্তফা কামাল। আর শিশু মরিয়ম সৎ মা আলিফা আক্তারের কাছেই থাকতো।
অভিযোগ রয়েছে নিজ নামে বাড়ি লিখে নিতে শিশুটিকে যৌন নির্যাতন শুরু করেন এই সৎ মা। তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগ করে শিশুটির পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত করেন। পরে অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।
এ ঘটনায় শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে তার সৎ মায়ের বিরুদ্ধে ১২ আগস্ট শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পরে তা মামলা হয়। এরপর ১৫ আগস্ট অভিযুক্ত সৎ মা আলিফা আক্তার রিপাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে।
শিশুটির দাদা বলেন, তার দ্বিতীয় পুত্রবধূ উগ্র প্রকৃতির। সে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অঘটনের চেষ্টা করেছে। তার ছেলে প্রবাসে চলে যাওয়ায় শিশু নাতনিকে নিয়ে সে এ বাসাতেই থাকতো এ বাসা লিখে নিতে সে নানা ধরনের ফন্দি তৈরি করেছিল। ১১ আগস্ট তার নাতনিতে দেখতে এসে তারা দেখতে পান সে খুব অসুস্থ। পরে দেখেন তার পায়ু ও যৌনাঙ্গে ক্ষত। এসময় তার পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসা করলে সে একেক সময় একে কথাবার্তা বলতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে কয়েকবার তার নাতিকে তার সৎ মা নানাভাবে নির্যাতন করেছে। তারা বিভিন্নভাবে সতর্ক করছিল সৎ মাকে। এরপরও তাদের কথা না শুনে শিশুকে এভাবে নির্যাতন করে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার সৎ মায়ের।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুর মৃত্যুর খবর তিনি পেয়েছেন। এখন নিহতের ময়নাতদন্ত করা হবে। সে অনুযায়ী দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের কথা শিকার করেছে আলিফা আক্তার রিপা।